জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠিত - ১৯৬৮ ইং


  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে
  • ছবির মত গ্রামটির তিনকুল ঘিরেই মাঝারী স্রোতস্বিনী নদী আর খাল। পশ্চিমে ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা মহুরী নদীর শান্ত স্রোতধারা। বর্ষায় ফুলে ফেঁপে উঠে দু-কুল ভাসিয়ে বাঘগোলা হাতর" "তুইয়া হাতর" "কইচ্ছা হাতর" আর "বড় হাতর" নামের মাঠ গুলোকে পলিতে ভরে দেয়। সে পলিতে সোনালী ফসল ফলে, ফলে হরেক রকমের রকি শিষ্য। গেরস্থের ঘরে সারা বছরের খোরাক থাকে। চিপনিয়া নদী, গতিয়া খাল আর ধোপাই উড়ির কুমে মাছ ধরে হাসি খুশিতে বসবাস করে আসছে গাঁওয়ের বাসিন্দারা। বর্ষায় নদী খাল আর মাঠ গুলো পানিতে থই এই করতো। নদীতে চলতো পাল তোলা নৌকা; সাম্পানের মাঝি গাইতো ভাটিয়ালী গান। এমনি এক সময় সেই গানের আসর বসতো মাঝে মাঝে।  গ্রামের বুড়োরা রাতে পুঁথি পড়তো, বাড়াতে তনে মুখর থাকতো গোটা গ্রাম। হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে বসবাস করে ‍আসছে ‍যুগের পর যুগ। মসজিদে আযানের সমধুর সুর। মন্দিরে কাসার ধ্বনি আর শ্রী মুসলিম মিলে মিশে সম্প্রীতির বন্ধনে বাংলর হাজারো গ্রামের মত অপরূপ কি জগতপুর না হয়ে পারে।
    " গোলা ভরা ধান, নদী খাল সুখ শান্তির পরশ ছিল গ্রামের মানুষের গ্রামের ছেলে মেয়েদের বোর্ড স্কুল জন্য যেতে হতো। তাও হাতে গোনা যেতো। কিন্তু (প্রাইমারী স্কুল) পাস করে দুরদুরান্তে পড়ার সুযোগ হতো। গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই গ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জনাব মনির আহম্মদ মজুমদারকে গ্রামে একটা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি তৎকালে মেট্রিক পাস করা শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। তিনি তখন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন হয়ে গেল গোটা জগতপুর বাসীর স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আর জগতপুর বাসীকে ঘুমাতে দিল না। হাইস্কুল বানাতে হবেই। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আবদুল কালামের স্বপ্ন তত্ত্বের মত। "স্বপ্ন সেটা নয়। যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ। স্বপ্ন সেটা যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না”। মনির আহম্মদ মজুমদারের হাইস্কুল বানানোর স্বপ্নটা জগতপুর বাসীর মনে দৃঢ় প্রত্যয়ে এক মাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে গেল। এমনি সময় একদিন গ্রামের রুহুল আমিন ভুঞাঁ,জাফর আহম্মদ ভূঞাঁসহ গ্রামের গণ্য মান্য ব্যক্তিদের সার্বিক সহযোগিতায়  হাই স্কুল করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়। যেই কথা সেই কাজ ১৯৬৮ সালের এক কনকনে শীতের রাতে স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রথম সত্য হয় প্রাইমারী স্কুলের মাঠে। সিদ্ধান্ত হয় হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করবেই। কিন্তু টাকা কড়ি জমি ঘর দরজার বন্দোবস্ত কি ভাবে হবে? জগতপুর বাসীর একতার শক্তি সব কিছুকেই সম্ভব করে ছিল।জগতপুরের মানুষের স্বপ্নের সাথে একাকার হয়ে সর্ব প্রথম যিনি সহায়তার হাত বাড়ালেন তিনি হচ্ছেন মনির আহম্মদ মজুমদার। তিনি দশ হাজার এক টাকা চাঁদা দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তার হাত বাড়ান। স্কুলটির প্রথম নাম করন করা হয় মনির আ.ম. জুনিয়র হাইস্কুল" হিসেবে। জগতপুর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ আপামর জনগন তাদের ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে এক দুর্নিবার আকাঙ্খা আর স্বপ্ন নিয়ে দলমত নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়লো স্কুল তৈরীর কাজে। কেউ বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন গাছ। অনেকে নগদ টাকা কড়ি দিয়েছেন। প্রতিটি গৃহস্থ দিয়েছেন ধান। এমনও ঘটনা আছে ঘরে ধান না থাকলে স্কুল কমিটির লোক জন মাঠের পাকা ধান কেটে মাড়াই করে ধান নিয়ে গেছেন। স্কুল নির্মানের জন্য। গ্রামবাসীর অদম্য আকাঙ্খার শক্তিতে সব অসম্ভব সম্ভব হয়ে তৈরী হয়ে গেছে মনির আ.ম. জুনিয়র হাইস্কুল"। একজন মানুষের স্বপ্ন কিভাবে সমগ্র এলাকার মানুষের স্বপ্নকে ছুঁয়ে যায়। সমগ্র দেশের মানুষের স্বপ্নকে দোলা দেয়।পরবর্তীতে স্কুলটি জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় নামে নামকরণ করা হয়।
    তারই জ্বলন্ত প্রমান আজকের  জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় আর আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। যে মানুষদের অদম্য উদ্যোগ অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের ফসল জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় তারা আমাদের নিকট চির পুজনীয়, সংগ্রামী চেতনা, ঐক্যের প্রতিক আর স্বপ্ন সৌধ নির্মানের মহান কারিগর, আমরা কি তাদের ভুলতে পারি। জগতপুরের শিক্ষিত মানুষের সমাজ গঠনের সেই অগ্র সেনানীদের বেশীর ভাগই আজ আমাদের মাঝে নেই। আমরা আজকের প্রজন্ম আমাদের সেই বীর পূর্ব পুরুষদের, আমাদের স্বপ্ন পূরনের সেই কলা কৌশলীদের আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয়মরহুম মনির আহাম্মদ মজুমদার বরণীয় আর অনুসরনী করে রাখার জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছি মাত্র। "জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়" জগতপুরের মানুষের স্বপ্ন সৌধ। জগতপুর মরহুম মনির আহাম্মদ মজুমদার উচ্চ বিদ্যালয় ০১/০১/১৯৬৮ সালে মরহুম মনির আহাম্মদ মজুমদার সাহেব গ্রাম বাসির র্সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন।০১/০১/১৯৭২ সালে নবম শ্রেণী চালু করা হয়। ১৯৭৪ সালে পুণাঙ্গ হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে প্রথম এস.এস.সি. পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। জগতপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দ্রষ্টা ছিলেন মরহুম মরহুম মনির আহাম্মদ মজুমদারমনির আহাম্মদ মজুমদার । এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। মরহুম মনির আহাম্মদ মজুমদার  ছিলেন এক মহান  শিক্ষা অন্তপ্রাণ এক মহৎ ব্যক্তি। এমন গুনি মানুষকে যথাযথ মর্যাদায় সম্মান না করলে আমরা অকৃতজ্ঞত্ব হয়ে যাব। সেই তালিকায় লিপিবদ্ধ গুনি মানুষদের তালিকাকে অসম্পূর্ণ বলেছি এ জন্যই যে, প্রয়াত মনির আহাম্মদ মজুমদার  সহ মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেই এ তালিকা করা হয়েছে। তারা নিজেরাই বলেছেন স্কুল প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত অনেক মানুষ মারা গিয়াছেন যাদের নাম ধাম তাদের স্মৃতিতে নেই। যথাযথ ভাবে কারো নামই লিপিবন্ধ ছিল না। গ্রামের মা বোনেরাও পুরুষদের সহায়তা করেছেন স্কুল প্রতিষ্ঠায়। গভীর রাতে স্কুল কমিটির লোকজন যখন ধান উঠাতে যেতেন অনেক মা বোন ঘুম ভেঙ্গে উঠে তাদের পিঠা বানিয়ে খাইয়েছেন।  সে সব মা বোনদের নাম কি লিপিবদ্ধ করতে পারছি ? কিন্তু তাদের অবদান স্কুল প্রতিষ্ঠায় খাটো করে দেখার মত নয়। তারা আমাদের কাছে চির স্মরণীয় বরণীয়। জগতপুরের মানুষের সে দিনের ঐক্যবদ্ধ জাগরণ স্কুল প্রতিষ্ঠায় যে ব্যতিক্রমি উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল পঞ্চাশ বছর পর তার ইজা টানতে গেলে হতবাক হতে হয়। সাত বাড়ী খুঁজে যে জগতপুরের একজন চিঠি লেখার লোক পাওয়া যেত না। সেখানে ঘরে ঘরে শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের ঢল। জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এখানকার ছেলে মেয়েরা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জগতপুর বাসীর জন্য বয়ে আনছেন বিরল সম্মান ও গৌরব। জগতপুর ছেলে মেয়েরা আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ায়, উকিল, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার, শিক্ষক, বিমান সেনা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারী চাকুরীজীবি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, এমনকি ইউরোপ আমেরিকার মত দেশে মর্যাদাপূর্ণ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। জগতপুরের ছেলে মেয়েরা আজ গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অনেক রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ পর্যায় তাদের রয়েছে প্রতিনিধিত্ব যা জগতপুর বাসীর গর্ব। জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাস করা ছেলে মেয়েরা জগতপুর সমাজ জীবনে এনেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হলে তা কোন দিনই সম্ভব ছিল না। জগতপুর সেই সব গুনি, ত্যাগী ও সংগ্রামী মানুষদের স্মরণ করছি সশ্রদ্ধ চিত্তে। “জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়" প্রতিষ্ঠায় তাদের অসামান্য অবদানের কথা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে, জগতপুর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট। “ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে থাকবো, আজীবন” এ শ্লোগানে মুখরিত থাকুক জগতপুর বাসীর আগামী পথচলা।
  • Developed by  SKILL BASED IT - SBIT